প্রকাশিত: ০৪/০২/২০১৮ ৮:২১ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৭:০৭ এএম

উখিয়া নিউজ ডেস্ক::

নিজ জন্মভূমি রাখাইনে ফেরত যেতে কিংবা আল ইয়াকিনের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই হতে হচ্ছে খুন, অপহরন বা মারধরের শিকার। এমন নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির কবলে অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরগুলোতে দিন কাটাতে হচ্ছে অধিকাংশ নিরীহ রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের। বিভিন্ন দায়িত্বশীল সূত্র, স্থায়ী সচেতন মহল, জনপ্রতিনিধি ও রোহিঙ্গা সূত্র এসবের পেছনে আশ্রয় শিবিরগুলোতে সেবার নামে নিয়োজিত কিছু দেশী-বিদেশী সংস্থাকে দায়ী করছে। বিপুল সংখ্যক আশ্রিত রোহিঙ্গাদের আইনের গন্ডির মধ্যে স্থিতিশীল রাখতে এবং প্রর্ত্যাপন কার্যক্রম সফল করতে আশ্রয় শিবির গুলোর অভ্যন্তরে এনজিও গুলোর অবাধ চলাচল ও বিদেশীদের অবস্থান কঠোর ভাবে বৈধতার আওতায় আনার দাবী তাদের।
গত ১৬ জানুয়ারী রোহিঙ্গা প্রর্ত্যাপনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার চুড়ান্ত চুক্তিতে পৌছে। এর দুইদিন পূর্বে ১৪ জানুয়ারী কুতুপালং আশ্রয় শিবিরে মমতাজ উল্লাহ নামের এক রোহিঙ্গা অপর রোহিঙ্গা প্রকাশ্যে ছুরিঘাতে খুন হয়। চার দিনের মাথায় ১৯ জানুয়ারী রাত ৮টার দিকে রোহিঙ্গা উগ্রপন্থি আরসা বা আল ইয়াকিনের বিরুদ্ধাচারন করেই রোহিঙ্গা ফেরত যাওয়ার পক্ষে কাজ করায় এক দল সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের আক্রমে খুন হয় মোঃ ইউছুপ (৩৫)। তিনি উখিয়ার থাইংখালী তাজনিমার খোলা আশ্রয় শিবিরের একটি ব্লকের হেড মাঝি ছিলেন। এরপর ২৪ জানুয়ারী পর্যন্ত বালুখালী ও কুতুপালং আশ্রয় শিবিরে ঘটে আরো দুটো খুনের ঘটনা। বিভিন্ন শিবিরে ঘটছে একাধিক অপহরন, সংঘর্ষ মারামারির ঘটনা। উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী সংযুক্ত আশ্রয় শিবিরে প্রায় ৬ লক্ষের অবস্থান। সংলগ্ন বালুখালী-২, ময়নার ঘোনা, তাজনিমার খোলা, হাকিমপাড়া, জামতলী ও শফিউল্লাহ কাটায় অবস্থান করছে তিন লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। টেকনাফের চাকমার কূল, উনচিপ্রাং, লেদা, নয়াপাড়া ও বাহার ছাড়ায় অবস্থান করছে প্রায় ২ লক্ষ রোহিঙ্গা।
রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরগুলোর আইন শৃংখলা, প্রর্ত্যাপন সংক্রান্ত সম্প্রতি দায়িত্বশীল গোয়েন্দা সংস্থা কুতুপালং, বালুখালী, থাইংখালী, পালংখালী, নয়াপাড়া অস্থায়ী আশ্রয় শিবির সহ বিভিন্ন ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের সাথে সন্দেহ ভাজন বিদেশী নাগরিক ও কতিপয় এনজিওগুলোর গোপন তৎপরতা লক্ষন করা যাচ্ছে বলে সরকারের নিকট প্রতিবেদন প্রেরন করেছে। এতে বলা হয়েছে মানবিক বিষয় ও ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় যে কোন স্বার্থাম্বেশী মহল বা ছদ্মবেশী মৌলবাদী, জঙ্গী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো আশ্রয় প্রার্থী রোহিঙ্গাদের উগ্রপন্থি কাজে লাগাতে পারে। এতে দেশের স্থানীয়, অভ্যন্তরীন ও জাতীয় নিরাপত্তা বিঘিœত হওয়ার আসংখ্যা রয়েছে। বিনামূল্যে প্রায় সকল সুবিধাদি ভোগরত রোহিঙ্গাদের উদ্দেশ্যে মূলক ভাবে বেশ কিছু এনজিও স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্থ বেকার জনগোষ্ঠির পরিবর্তে রোহিঙ্গাদের নানা ধরনের চাকুরী ও মজুরী ভিত্তিক কাজে নিয়োজিত করছে। এ নিয়ে স্থানীয় লোকজনদের মাঝে চাপা ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।
প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি এনজিওর বিদেশী কর্মকর্তারা ঘন ঘন বাংলাদেশে ও অবাধে রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির গুলোতে যাতায়াত করছে বলে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া অনেক বিদেশী অন অ্যারাভ্যাল বা টুরিস্ট ভিসায় বাংলাদেশে আগমন করছেন। প্রায় এক মাস অবস্থানের পর পার্শ্ববর্তী অন্য কোন দেশে ফিরে যাচ্ছে। সেখানে কিছুদিন থাকার পর আবার বাংলাদেশে একই ভাবে এসে বিভিন্ন এনজিওর কাজে নিযুক্ত হচ্ছেন। বিনিয়োগ ও পর্যটন বান্ধব নীতির শীতিলতায় ভিসার সুযোগ নিয়ে ঘন ঘন অনেক বিদেশী বাংলাদেশে যাতায়াত করে উল্লেখ যোগ্য ডলার পরিমাণের বেতন, ভাতা ও আনুতোষিক আয় করলেও বিদ্যমান আয়কর ফাঁকি দিচ্ছেন। এ ছাড়া মধ্য প্রাচ্য ও পাকিস্তান ভিত্তিক একটি এনজিওর অর্থায়নে হ্নীলার একটি মাদ্রাসায় ২৫-৩০ জন রোহিঙ্গা কিশোর ও যুবক আবাসিকে অবস্থান করছে। এদের অন্তত ২০ জনের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক গত ৪ জানুয়ারী কতিপয় এনজিওর কর্মকান্ডের পর একটি প্রতিবেদন দিয়েছেন। এতে এমডিএস, ইডিএএস, এসআরপিভি, শেড (ওয়াশ)সহ কয়েকটি এনজিও’র বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের সংঘটিত করছে, স্থানীয় জামাত শিবিরে প্রচারনা চালানো চেষ্টা চালাচ্ছে মর্মে এগুলো কার্যক্রমের উপর গোয়েন্দা সংস্থা নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব দিয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে জিএসকে, সিজেডএম, নুসরা, ওয়াটার এইড, আবুল খায়ের ফাউন্ডেশন ও আল্লামা ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশন এর কার্যক্রম বন্ধ পূর্বক নতুন ভাবে অনুমোদন না দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট প্রতিবেদন দিয়েছে।
উখিয়ার পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমরা বার বার রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও প্রত্যাবাসন কার্যক্রম সফল করতে দেশী-বিদেশী এনজিও গুলোর কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণের দাবি জানিয়ে আসছি।
এসব এনজিও রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন কর্মকান্ডে নিয়োজিত করেছে তাদের মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে নান বিশৃংখলা ও প্রত্যাবাসন কর্মকান্ড ব্যহত করছে।
উখিয়ার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আবুল খায়ের বলেন, রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরগুলো ক্রমান্বয়ে অস্থির হয়ে উঠছে। প্রতিদিন কোন না কোন অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। ইতিমধ্যে ৫টি পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন রয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিষ্টেট ও উখিয়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) একরামুল ছিদ্দিক বলেন, ইতিমধ্যে তাজনিমার খোলায় রোহিঙ্গা নেতা খুনের সাথে জড়িত একজনকে আটক করা হয়েছে। তার কাজ থেকে দুই রাউন্ড গুলি সহ আমেরিকার তৈরী একটি চকচকে পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি জানান, যাদের খাওয়ার ও থাকার মত সংকট রয়েছে তাদের কাছে কিভাবে আমেরিকার তৈরী অস্ত্র আসলো তা বোধগম্য নয়।

পাঠকের মতামত

কক্সবাজারে মানি লন্ডারিংয়ের বিরুদ্ধে এনজিওগুলোকে সতর্ক থাকার আহ্বান

বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান মো. মাসুদ বিশ্বাস বলেছেন, দেশের অভ্যন্তরে এবং বিদেশে লুকিয়ে ...

দলের নির্দেশনাকে পাত্তা দিচ্ছে না টেকনাফ মহিলা দলের দুই নেত্রী

আ.লীগ সরকারের অধীনে ধারাবাহিকভাবে সকল নির্বাচন বর্জন করে আসছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। তারেই ধারাবাহিকতায় ...

হিট স্ট্রোকে রামু রহমানিয়া মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা ছালামত উল্লাহর ইন্তেকাল, নামাযে জানাযা সম্পন্ন

রামু মেরংলোয়া রহমানিয়া ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা ছালামত উল্লাহ হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল ...